বইঃ নিহত নক্ষত্র
লেখকঃ আহমদ ছফা
বাংলা বইয়ের ভূবন freebangla-book.blogspot.com এ আপনাকে স্বাগতম। এখানে আপনি সব ধরনের বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পাবেন। আপনি আপনার পছন্দ মতো বই ডাউনলোড করতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট টি ঘুরে দেখতে পারেন।
আহমদ ছফা এর এই বইটি ডাউনলোড করতে চাইলে এই পেজের নিচে দেয়া লিঙ্কে ক্লিক করে খুব সহজেই ডাউনলোড করে ফেলুন।
Book Review: আমার বিশেষণের অভিধান খুব সমৃদ্ধ নয়। 'অসাধারণ', 'দুর্দান্ত', 'চমৎকার' ইত্যাদি ক'টা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেই মোটামুটি! সম্বল এই কয়খানা মাত্র, তাই বহু ব্যবহারে তারা জীর্ণও বটে। প্রায়ই দেখা যায় দ্রব্যের গুণাবলীর সঠিক পরিমাপ এই বিশেষণেরা দিতে পারছেনা। দাঁড়িপাল্লায় নিয়ে মাপলে দুদিকের পাল্লা সমান সমান ইদানীং আর হয়না (অভিযোগ আছে আমার বিরুদ্ধে, আমি নাকি কারচুপি করে আমার বিশেষণ এর 'বাটখারা' গুলোর ওজন কমিয়ে দেই, বিশেষত হুমায়ূন আহমেদের বই এর ক্ষেত্রে!) দীর্ঘ ব্যবহারে ক্ষয়ে ক্ষয়ে হোক আর 'সূক্ষ্ম কারচুপি'র কারণেই হোক, এক শব্দের বাটখারা তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। অতএব একটু ঘোরালো করে বলা যাক, আধুনিক সময়ে বাংলাদেশী তো বটেই, বাংলা সাহিত্যেই 'নিহত নক্ষত্র' বইয়ে সংকলিত ছোটগল্পগুলোর কাছাকাছি মানের গল্প বেশ দুর্লভ! বাটখারার ওজন নিয়ে এখন যাঁর সন্দেহ হবে তিনিই কষ্ট করে সব পড়ে দেখুন, আমার কি!
স্রেফ কাহিনী বলে যাওয়াটাই সাহিত্য নয় নিশ্চয়ই। সাহিত্য মানুষকে উঁচু এক পাহাড়ের চূড়ায় চোখে দূরবীন লাগিয়ে অলক্ষ্যে, নিঃশব্দে নিচের সবাইকে পর্যবেক্ষণ করবার অনুভূতিটা কেমন তার একটা ছোট্ট ধারণা দেয়, তাকে চিন্তা করতে শেখায়। চিন্তার উদ্রেককারী পর্যবেক্ষণের এই উপাদানগুলো এই বইয়ে বেশ ভালোভাবেই আছে। বইয়ে সংকলিত ৯টি গল্পের অন্তত ৬ টি গল্পে এ ব্যাপারটি খুব দৃঢ় ভাবে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণ্ডামী, খুনী এক ডাকাতের বিপন্ন এক মুহূর্তের ভাবনা, ধর্মের নামে ভণ্ডামী, অকালে সন্তানহারানো মায়ের ক্ষোভ, চামড়ার নিচে সুপ্ত কামনা ইত্যাদি বিষয়গুলোই গল্পগুলোর উপজীব্য। এগুলো সবই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে 'ক্লিশে' হয়ে গেছে, এই ঘটনাগুলোর নির্লজ্জ পুনরাবৃত্তি দেখে দেখে চোখও আমাদের পেকে গেছে হয়ত, তবু ভেতরের একটা গল্প থাকেই। বাংলা ১৩৭১-১৩৭৫ সালের মাঝে লেখা এই গল্পগুলো, আজ থেকে প্রায় পাঁচ দশক আগে। তখন যেমন ছফা সদর্পে লিখে গেছেন "মুসলমান সমাজ এখনও চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে রামমোহনের স্তর অতিক্রম করেনি। যাঁদের ভয়ঙ্কর প্রগতিশীল মনে করে সভা করে গলায় মালা দুলিয়ে দেই, তারাও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ভালো করে টিপে দেখুন, দেখবেন, মানুষ-পঁচা গন্ধ বেরোয়। ভেতরে নোংরা, ওপরের চটকদার চেহারাটুকুই চোখে পড়ছে। রাজনীতিবিদেরা যুবকদের সমাজ পরিবর্তনের কাজে না লাগিয়ে, তোষামোদে কাজে লাগিয়েছে। তাতে করে যুবশক্তির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।" আজকের বাংলাদেশের ভয়াবহ রাজনৈতিক দুরাবস্থা কিংবা মসজিদ থেকে চাঁদে সাঈদীর চেহারা দেখতে পাবার ঘোষণা এই কথাগুলোকেই প্রতিফলিত করে। ঘটনাগুলো ক্লিশে কিন্তু কী চিরন্তন! ছফা কোন নির্দিষ্ট ধর্মে সরাসরি বিশ্বাসী হয়ত ছিলেননা কিন্তু তাঁর লেখায় ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা কখনো আসেনি, এসেছে ধর্মকে বদলে দেয়া সুবিধাবাদী মানুষগুলোকে মুখ ভ্যাংচানী। ছফা ভয়ানক সাহসী ছিলেন, কোন লুকোছাপাই ছিলোনা তাঁর মাঝে। মানুষকে কথার হুল যেমন ফোটাতে পারতেন, সম্মানও তেমনই করতেন। আজকের 'প্রগতিশীল' লেখক-বুদ্ধিজীবী মহল কি শিক্ষা নেবেন এখান থেকে?
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর 'প্রাগৈতিহাসিক' গল্পটি পড়ার অনুভূতি অনেকখানিই ফিরিয়ে দিলো 'গন্তব্য' গল্পটি। ভীষণ ভালো লেগেছে 'পদাঘাতের পটভূমি' (সংলাপ গুলো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়), 'নিহত নক্ষত্র', 'আস্বাদ', 'প্রতিপক্ষ', 'কবি' আর শেষে অবশ্যই ছফার বিটকেলে সেন্স অফ হিউমার এর সামান্য পরিচয়বাহক গল্প 'কাজলী'।
আহমদ ছফা গত হয়েছেন বেশ আগে কিন্তু তাঁর সৃষ্টি তাঁকে নক্ষত্র বানিয়ে রেখেছে। খুব বড় নক্ষত্র যখন 'মারা যায়' তা পর্যায়ক্রমে প্রচণ্ড উজ্জ্বল মহাজাগতিক বিস্ফোরণ 'সুপারনোভা' তে পরিণত হয়। আমাদের মার খেতে অভ্যস্ত, নিঃস্পৃহ, নিরুদ্যম সমাজেও এমন একটি বিস্ফোরণ এখন খুব দরকার। সময়ের জন্য কিছুই থেমে থাকেনা। একসময় নিশ্চয়ই এমন একটি সুপারনোভীয় বিস্ফোরণ হবে। ততদিন পর্যন্ত ছফার 'গাভী বিত্তান্ত' কিংবা 'একজন আলী কেনানের উত্থান পতন' কিংবা 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা' ইত্যাদি রচনাগুলোর মধ্যে দিয়ে বিস্ফোরণের বারুদ জমতে থাকুক।
ডাউনলোড করতে নিচে ক্লিক করুন।
লেখকঃ আহমদ ছফা
বাংলা বইয়ের ভূবন freebangla-book.blogspot.com এ আপনাকে স্বাগতম। এখানে আপনি সব ধরনের বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পাবেন। আপনি আপনার পছন্দ মতো বই ডাউনলোড করতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট টি ঘুরে দেখতে পারেন।
আহমদ ছফা এর এই বইটি ডাউনলোড করতে চাইলে এই পেজের নিচে দেয়া লিঙ্কে ক্লিক করে খুব সহজেই ডাউনলোড করে ফেলুন।
Book Review: আমার বিশেষণের অভিধান খুব সমৃদ্ধ নয়। 'অসাধারণ', 'দুর্দান্ত', 'চমৎকার' ইত্যাদি ক'টা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেই মোটামুটি! সম্বল এই কয়খানা মাত্র, তাই বহু ব্যবহারে তারা জীর্ণও বটে। প্রায়ই দেখা যায় দ্রব্যের গুণাবলীর সঠিক পরিমাপ এই বিশেষণেরা দিতে পারছেনা। দাঁড়িপাল্লায় নিয়ে মাপলে দুদিকের পাল্লা সমান সমান ইদানীং আর হয়না (অভিযোগ আছে আমার বিরুদ্ধে, আমি নাকি কারচুপি করে আমার বিশেষণ এর 'বাটখারা' গুলোর ওজন কমিয়ে দেই, বিশেষত হুমায়ূন আহমেদের বই এর ক্ষেত্রে!) দীর্ঘ ব্যবহারে ক্ষয়ে ক্ষয়ে হোক আর 'সূক্ষ্ম কারচুপি'র কারণেই হোক, এক শব্দের বাটখারা তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। অতএব একটু ঘোরালো করে বলা যাক, আধুনিক সময়ে বাংলাদেশী তো বটেই, বাংলা সাহিত্যেই 'নিহত নক্ষত্র' বইয়ে সংকলিত ছোটগল্পগুলোর কাছাকাছি মানের গল্প বেশ দুর্লভ! বাটখারার ওজন নিয়ে এখন যাঁর সন্দেহ হবে তিনিই কষ্ট করে সব পড়ে দেখুন, আমার কি!
স্রেফ কাহিনী বলে যাওয়াটাই সাহিত্য নয় নিশ্চয়ই। সাহিত্য মানুষকে উঁচু এক পাহাড়ের চূড়ায় চোখে দূরবীন লাগিয়ে অলক্ষ্যে, নিঃশব্দে নিচের সবাইকে পর্যবেক্ষণ করবার অনুভূতিটা কেমন তার একটা ছোট্ট ধারণা দেয়, তাকে চিন্তা করতে শেখায়। চিন্তার উদ্রেককারী পর্যবেক্ষণের এই উপাদানগুলো এই বইয়ে বেশ ভালোভাবেই আছে। বইয়ে সংকলিত ৯টি গল্পের অন্তত ৬ টি গল্পে এ ব্যাপারটি খুব দৃঢ় ভাবে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণ্ডামী, খুনী এক ডাকাতের বিপন্ন এক মুহূর্তের ভাবনা, ধর্মের নামে ভণ্ডামী, অকালে সন্তানহারানো মায়ের ক্ষোভ, চামড়ার নিচে সুপ্ত কামনা ইত্যাদি বিষয়গুলোই গল্পগুলোর উপজীব্য। এগুলো সবই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে 'ক্লিশে' হয়ে গেছে, এই ঘটনাগুলোর নির্লজ্জ পুনরাবৃত্তি দেখে দেখে চোখও আমাদের পেকে গেছে হয়ত, তবু ভেতরের একটা গল্প থাকেই। বাংলা ১৩৭১-১৩৭৫ সালের মাঝে লেখা এই গল্পগুলো, আজ থেকে প্রায় পাঁচ দশক আগে। তখন যেমন ছফা সদর্পে লিখে গেছেন "মুসলমান সমাজ এখনও চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে রামমোহনের স্তর অতিক্রম করেনি। যাঁদের ভয়ঙ্কর প্রগতিশীল মনে করে সভা করে গলায় মালা দুলিয়ে দেই, তারাও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ভালো করে টিপে দেখুন, দেখবেন, মানুষ-পঁচা গন্ধ বেরোয়। ভেতরে নোংরা, ওপরের চটকদার চেহারাটুকুই চোখে পড়ছে। রাজনীতিবিদেরা যুবকদের সমাজ পরিবর্তনের কাজে না লাগিয়ে, তোষামোদে কাজে লাগিয়েছে। তাতে করে যুবশক্তির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।" আজকের বাংলাদেশের ভয়াবহ রাজনৈতিক দুরাবস্থা কিংবা মসজিদ থেকে চাঁদে সাঈদীর চেহারা দেখতে পাবার ঘোষণা এই কথাগুলোকেই প্রতিফলিত করে। ঘটনাগুলো ক্লিশে কিন্তু কী চিরন্তন! ছফা কোন নির্দিষ্ট ধর্মে সরাসরি বিশ্বাসী হয়ত ছিলেননা কিন্তু তাঁর লেখায় ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা কখনো আসেনি, এসেছে ধর্মকে বদলে দেয়া সুবিধাবাদী মানুষগুলোকে মুখ ভ্যাংচানী। ছফা ভয়ানক সাহসী ছিলেন, কোন লুকোছাপাই ছিলোনা তাঁর মাঝে। মানুষকে কথার হুল যেমন ফোটাতে পারতেন, সম্মানও তেমনই করতেন। আজকের 'প্রগতিশীল' লেখক-বুদ্ধিজীবী মহল কি শিক্ষা নেবেন এখান থেকে?
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর 'প্রাগৈতিহাসিক' গল্পটি পড়ার অনুভূতি অনেকখানিই ফিরিয়ে দিলো 'গন্তব্য' গল্পটি। ভীষণ ভালো লেগেছে 'পদাঘাতের পটভূমি' (সংলাপ গুলো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়), 'নিহত নক্ষত্র', 'আস্বাদ', 'প্রতিপক্ষ', 'কবি' আর শেষে অবশ্যই ছফার বিটকেলে সেন্স অফ হিউমার এর সামান্য পরিচয়বাহক গল্প 'কাজলী'।
আহমদ ছফা গত হয়েছেন বেশ আগে কিন্তু তাঁর সৃষ্টি তাঁকে নক্ষত্র বানিয়ে রেখেছে। খুব বড় নক্ষত্র যখন 'মারা যায়' তা পর্যায়ক্রমে প্রচণ্ড উজ্জ্বল মহাজাগতিক বিস্ফোরণ 'সুপারনোভা' তে পরিণত হয়। আমাদের মার খেতে অভ্যস্ত, নিঃস্পৃহ, নিরুদ্যম সমাজেও এমন একটি বিস্ফোরণ এখন খুব দরকার। সময়ের জন্য কিছুই থেমে থাকেনা। একসময় নিশ্চয়ই এমন একটি সুপারনোভীয় বিস্ফোরণ হবে। ততদিন পর্যন্ত ছফার 'গাভী বিত্তান্ত' কিংবা 'একজন আলী কেনানের উত্থান পতন' কিংবা 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা' ইত্যাদি রচনাগুলোর মধ্যে দিয়ে বিস্ফোরণের বারুদ জমতে থাকুক।
ডাউনলোড করতে নিচে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment